🌹চাকরির প্রস্তুতি::ভারতের রাষ্ট্রবিজ্ঞান::ভারতীয় সংবিধানের ঐতিহাসিক পটভূমি:: বিস্তারিত আলোচনা।🌹

📘 ভারতের রাষ্ট্রবিজ্ঞান:
অধ্যায় – ভারতের সংবিধানের ঐতিহাসিক পটভূমি:
[FOR WBCS, UPPER PRIMARY TET, PSC, SSC, RRB, GROUP-C, GROUP-D ETC]

🔹 ব্রিটিশ ভারতের গুরুত্বপূর্ণ আইনসমূহ (বিস্তারিত আলোচনা)

ভারতের সংবিধান প্রণয়নের পেছনে ২০০ বছরের ঔপনিবেশিক শাসন একটি বড় ভিত্তি তৈরি করেছে। ব্রিটিশরা ভারত শাসনের সুবিধার্থে একের পর এক আইন ও বিধি প্রণয়ন করেছিল। এই আইনগুলো একদিকে যেমন প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রণ কায়েম করেছিল, অন্যদিকে ভারতীয়দের মধ্যে সংবিধানিক চেতনা জাগ্রত করেছিল। নিচে ক্রমানুসারে বিস্তারিত আলোচনা দেওয়া হলো –

১. ১৭৭৩ সালের নিয়ামক আইন (Regulating Act, 1773)

প্রথম আইন যেখানে ব্রিটিশ পার্লামেন্ট ভারতের শাসন ব্যবস্থায় হস্তক্ষেপ করে।
বেঙ্গল প্রেসিডেন্সির গভর্নরকে করা হয় গভর্নর-জেনারেল অফ বেঙ্গল (প্রথম: ওয়ারেন হেস্টিংস)।
গঠিত হয় গভর্নর-জেনারেল ইন কাউন্সিল (চারজন সদস্যসহ)।
কলকাতায় প্রতিষ্ঠিত হয় প্রথম সুপ্রিম কোর্ট (১৭৭৪)।
কোম্পানির কর্পোরেট চরিত্র ক্ষুণ্ণ হয়, সংসদের কর্তৃত্ব শুরু হয়।

২. ১৭৮৪ সালের পিটস ইন্ডিয়া আইন (Pitt’s India Act, 1784)

কোম্পানির উপর সরাসরি ব্রিটিশ সরকারের নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা হয়।
গঠিত হয় বোর্ড অব কন্ট্রোল (কোম্পানির রাজনৈতিক বিষয়ে নজরদারি করার জন্য)।
দ্বৈত শাসন ব্যবস্থা: কোম্পানি বাণিজ্যিক কাজ দেখবে, ব্রিটিশ সরকার রাজনৈতিক বিষয় দেখবে।
ফলে ভারত ব্রিটিশ সরকারের অধীনে পরোক্ষভাবে চলে আসে।

৩. ১৮১৩ সালের চার্টার আইন (Charter Act, 1813)

ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির বাণিজ্যিক একচেটিয়া অধিকার শেষ করা হয়।
ভারতীয়দের জন্য ব্যবসা-বাণিজ্যের সুযোগ তৈরি হয়।
প্রথমবার ভারতীয় শিক্ষায় সরকারি অর্থ বরাদ্দ (১ লক্ষ টাকা) হয়।
খ্রিস্টান মিশনারিদের প্রচার ও শিক্ষা কার্যক্রম চালানোর অনুমতি দেওয়া হয়।

৪. ১৮৩৩ সালের চার্টার আইন (Charter Act, 1833)

গবর্নর-জেনারেল অফ বেঙ্গল → গবর্নর-জেনারেল অফ ইন্ডিয়া (প্রথম: লর্ড উইলিয়াম বেন্টিঙ্ক)।
আইন প্রণয়নের জন্য কেন্দ্রীয় আইনসভা প্রতিষ্ঠা।
দাসপ্রথা (Slavery) বিলোপের প্রক্রিয়া শুরু।
কোম্পানির বাণিজ্যিক কাজ সম্পূর্ণ শেষ হয়ে শুধু রাজনৈতিক কাজ বাকি থাকে।

৫. ১৮৫৩ সালের চার্টার আইন (Charter Act, 1853)

গভর্নর-জেনারেল ইন কাউন্সিল → আইন প্রণয়ন ও কার্যনির্বাহী বিভাগ আলাদা হয়।
আইনসভায় ভারতীয় সদস্যদের অন্তর্ভুক্তি শুরু হয়।
প্রথমবার প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার মাধ্যমে ICS এ প্রবেশাধিকার।
ভারতীয়দের প্রশাসনে প্রবেশাধিকার পেতে সুযোগ তৈরি হয়।

৬. ১৮৫৮ সালের ভারত শাসন আইন (Government of India Act, 1858)

১৮৫৭ সালের বিদ্রোহের পরে কোম্পানির শাসনের সমাপ্তি।
ভারত সরাসরি ব্রিটিশ ক্রাউনের অধীনে আসে।
গভর্নর-জেনারেল পদকে করা হয় ভাইসরয় (প্রথম: লর্ড ক্যানিং)।
লন্ডনে সেক্রেটারি অব স্টেট ফর ইন্ডিয়া পদ সৃষ্টি হয়, তার অধীনে ভারত পরিষদ গঠিত হয়।
প্রশাসনিক কাঠামোতে ব্রিটিশ সরকারের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা।

৭. ১৮৬১ সালের ভারত পরিষদ আইন (Indian Councils Act, 1861)

আইনসভায় ভারতীয়দের মনোনয়ন দেওয়া হয়।
গভর্নর-জেনারেল প্রদেশগুলিকে আইন প্রণয়নের ক্ষমতা দেন।
প্রদেশে আইন পরিষদ গঠন করা হয়।
অরাজনৈতিক ভারতীয়রা প্রথমবার আইনসভায় প্রবেশ করেন।

৮. ১৮৯২ সালের ভারত পরিষদ আইন (Indian Councils Act, 1892)

প্রথমবার আংশিক নির্বাচনের মাধ্যমে ভারতীয়রা আইনসভায় আসতে পারেন।
আইনসভায় বাজেট আলোচনার সুযোগ দেওয়া হয়।
ভারতীয়রা প্রশ্ন করার অধিকার পান, তবে ভোটাধিকার সীমিত ছিল।
জাতীয় কংগ্রেসের দাবির আংশিক প্রতিফলন ঘটে।

৯. ১৯০৯ সালের ভারত পরিষদ আইন (Indian Councils Act, 1909/মরলে-মিন্টো সংস্কার)

আইনসভায় সদস্য সংখ্যা বৃদ্ধি করা হয়।
প্রথমবার আলাদা নির্বাচনী ব্যবস্থা (Separate Electorate) মুসলমানদের জন্য চালু হয়।
ভারতীয়রা এক্সিকিউটিভ কাউন্সিলে অন্তর্ভুক্ত হন (প্রথম: স্যার সত্যেন্দ্রপ্রসন্ন সিনহা)।
জাতীয়তাবাদকে বিভক্ত করার ষড়যন্ত্র হিসেবে দেখা হয়।

১০. ১৯১৯ সালের ভারত শাসন আইন (Government of India Act, 1919/মন্টেগু-চেমসফোর্ড সংস্কার)

দ্বৈত শাসন ব্যবস্থা (Dyarchy) প্রদেশে চালু হয়:
- স্থানান্তরিত বিষয়: শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি।
- সংরক্ষিত বিষয়: পুলিশ, রাজস্ব, বিচার।
কেন্দ্রীয় আইনসভায় দ্বিকক্ষবিশিষ্টতা:
- কাউন্সিল অব স্টেট (উপরকক্ষ)।
- লেজিসলেটিভ অ্যাসেম্বলি (নিচকক্ষ)।
আইনসভার ক্ষমতা কিছুটা বৃদ্ধি পেলেও ব্রিটিশ নিয়ন্ত্রণ অক্ষুণ্ণ ছিল।

১১. ১৯৩৫ সালের ভারত শাসন আইন (Government of India Act, 1935)

ভারতীয় সংবিধানের মূল ভিত্তি বলা হয়।
প্রদেশে Provincial Autonomy চালু হয়।
কেন্দ্রীয় স্তরে ফেডারেশন গঠনের পরিকল্পনা করা হয় (বাস্তবায়ন হয়নি)।
ফেডারেল কোর্ট গঠন (১৯৩৭)।
আইনসভা দ্বিকক্ষবিশিষ্ট হয়।
ভারতীয় রাজনীতিতে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার গভীর ভিত্তি তৈরি হয়।

১২. ১৯৪৭ সালের ভারত স্বাধীনতা আইন (Indian Independence Act, 1947)

ভারত বিভক্ত হয়ে ভারত ও পাকিস্তান নামে দুটি স্বাধীন রাষ্ট্র সৃষ্টি হয়।
ব্রিটিশ শাসনের অবসান হয়।
ভারতীয় গণপরিষদকে (Constituent Assembly) সংবিধান প্রণয়নের পূর্ণ ক্ষমতা দেওয়া হয়।
ভারত হয়ে ওঠে সার্বভৌম গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র।

🔹 ব্রিটিশ ভারতের গুরুত্বপূর্ণ আইনসমূহ (টেবিল আকারে):

বছর	আইন/অ্যাক্ট	প্রধান বৈশিষ্ট্য	প্রভাব/গুরুত্ব
১৭৭৩	নিয়ামক আইন (Regulating Act)	গবর্নর অফ বেঙ্গল → গবর্নর-জেনারেল অফ বেঙ্গল; কলকাতায় সুপ্রিম কোর্ট (১৭৭৪)	ভারতের প্রশাসনে ব্রিটিশ সংসদের সরাসরি হস্তক্ষেপ শুরু
১৭৮৪	পিটস ইন্ডিয়া আইন (Pitt’s India Act)	বোর্ড অব কন্ট্রোল গঠন; দ্বৈত শাসন পদ্ধতি	কোম্পানি ও ক্রাউনের যৌথ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা
১৮১৩	চার্টার আইন	কোম্পানির বাণিজ্যিক একচেটিয়া অধিকার শেষ; শিক্ষা খাতে সরকারি অর্থ বরাদ্দ	ভারতীয় ব্যবসা-বাণিজ্যের সুযোগ বৃদ্ধি
১৮৩৩	চার্টার আইন	গবর্নর-জেনারেল অফ ইন্ডিয়া পদ; কেন্দ্রীয় আইনসভা গঠন	কোম্পানির বাণিজ্যিক ভূমিকা শেষ, কেবল রাজনৈতিক ভূমিকা রয়ে গেল
১৮৫৩	চার্টার আইন	আইন প্রণয়ন ও প্রশাসনিক কাজ আলাদা; ICS-এ প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষা চালু	ভারতীয়দের প্রশাসনে প্রবেশের পথ উন্মুক্ত
১৮৫৮	ভারত শাসন আইন	কোম্পানির শাসন শেষ; ভাইসরয়ের পদ সৃষ্টি; সেক্রেটারি অব স্টেট ফর ইন্ডিয়া	ভারত সরাসরি ব্রিটিশ ক্রাউনের অধীনে
১৮৬১	ভারত পরিষদ আইন	আইনসভায় ভারতীয়দের মনোনয়ন; প্রদেশে আইন প্রণয়নের ক্ষমতা	ভারতীয়দের প্রথমবার আইনসভায় প্রবেশাধিকার
১৮৯২	ভারত পরিষদ আইন	আংশিক নির্বাচন; বাজেট আলোচনার সুযোগ; প্রশ্ন করার অধিকার	জাতীয় কংগ্রেসের দাবির আংশিক প্রতিফলন
১৯০৯	ভারত পরিষদ আইন (মরলে-মিন্টো সংস্কার)	আইনসভায় ভারতীয়দের সংখ্যা বৃদ্ধি; মুসলমানদের জন্য পৃথক নির্বাচনী ব্যবস্থা	জাতীয়তাবাদে বিভাজনের সূচনা
১৯১৯	ভারত শাসন আইন (মন্টেগু-চেমসফোর্ড সংস্কার)	প্রদেশে দ্বৈত শাসন (Dyarchy); কেন্দ্রীয় আইনসভায় দ্বিকক্ষবিশিষ্টতা	ভারতীয়দের সীমিত প্রশাসনিক অংশগ্রহণ বৃদ্ধি
১৯৩৫	ভারত শাসন আইন	প্রাদেশিক স্বায়ত্তশাসন; ফেডারেল কোর্ট গঠন; ফেডারেশন পরিকল্পনা	ভারতের সংবিধানের মূল ভিত্তি
১৯৪৭	ভারত স্বাধীনতা আইন	ভারত-পাকিস্তান বিভাজন; ব্রিটিশ শাসনের অবসান; গণপরিষদকে সংবিধান প্রণয়নের ক্ষমতা	ভারত স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্রে পরিণত

🔹 ব্রিটিশ ভারতের গুরুত্বপূর্ণ আইনসমূহের ট্রিক

১. ১৭৭৩ – নিয়ামক আইন

👉 ট্রিক: “নিয়ম এলো কলকাতায় কোর্ট”

মনে রাখবেন: নিয়ামক আইন = কলকাতায় সুপ্রিম কোর্ট (১৭৭৪)।

২. ১৭৮৪ – পিটস ইন্ডিয়া আইন

👉 ট্রিক: “পিটে বোর্ড বসলো”

মনে রাখবেন: বোর্ড অব কন্ট্রোল গঠন।

৩. ১৮১৩ – চার্টার আইন

👉 ট্রিক: “চার্টার ভাঙল একচেটিয়া বাণিজ্য”

মনে রাখবেন: কোম্পানির বাণিজ্যিক একচেটিয়া অধিকার শেষ।

৪. ১৮৩৩ – চার্টার আইন

👉 ট্রিক: “৩৩-তে ইন্ডিয়ার গভর্নর”

মনে রাখবেন: গভর্নর-জেনারেল অফ ইন্ডিয়া প্রথমবার (লর্ড বেন্টিঙ্ক)।

৫. ১৮৫৩ – চার্টার আইন

👉 ট্রিক: “ICS পরীক্ষা তেই-পঞ্চাশ-তিন”

মনে রাখবেন: প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষা শুরু।

৬. ১৮৫৮ – ভারত শাসন আইন

👉 ট্রিক: “বিদ্রোহ শেষে ক্রাউন এল”

মনে রাখবেন: কোম্পানি গেল, ভারত সরাসরি ক্রাউনের অধীনে।

৭. ১৮৬১ – ভারত পরিষদ আইন

👉 ট্রিক: “ষাট-এক এ ভারতীয় মনোনয়ন”

মনে রাখবেন: ভারতীয়রা প্রথমবার আইনসভায় প্রবেশ।

৮. ১৮৯২ – ভারত পরিষদ আইন

👉 ট্রিক: “আটানব্বইতে বাজেট আলাপ”

মনে রাখবেন: বাজেট আলোচনা + নির্বাচনী ব্যবস্থা শুরু।

৯. ১৯০৯ – মরলে-মিন্টো সংস্কার

👉 ট্রিক: “মুসলিম আলাদা ভোট – ১৯০৯”

মনে রাখবেন: Separate Electorate চালু।

১০. ১৯১৯ – মন্টেগু-চেমসফোর্ড সংস্কার

👉 ট্রিক: “ডায়ার্কি-দ্বৈত শাসন – উনিশ-উনিশ”

মনে রাখবেন: প্রদেশে দ্বৈত শাসন ব্যবস্থা চালু।

১১. ১৯৩৫ – ভারত শাসন আইন

👉 ট্রিক: “সংবিধানের মেরুদণ্ড – পঁইত্রিশ”

মনে রাখবেন: Provincial Autonomy + Federal Court।

১২. ১৯৪৭ – ভারত স্বাধীনতা আইন

👉 ট্রিক: “স্বাধীন ভারত বিভাজন”

মনে রাখবেন: ভারত-পাকিস্তান সৃষ্টি, ব্রিটিশ শাসনের অবসান।

🏁 সারসংক্ষেপ ট্রিক-লাইন (সব মিলিয়ে মনে রাখার জন্য)

👉 “কলকাতা কোর্টে (১৭৭৩) পিটে বোর্ড (১৭৮৪), বাণিজ্য ভাঙল (১৮১৩), ইন্ডিয়ার গভর্নর (১৮৩৩), ICS পরীক্ষা (১৮৫৩), ক্রাউনের শাসন (১৮৫৮), ভারতীয় মনোনয়ন (১৮৬১), বাজেট আলাপ (১৮৯২), মুসলিম ভোট (১৯০৯), দ্বৈত শাসন (১৯১৯), সংবিধানের মেরুদণ্ড (১৯৩৫), স্বাধীনতা (১৯৪৭)।”

🏁 উপসংহার:

উপরিউক্ত আইনসমূহ ভারতের রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক কাঠামোকে ধাপে ধাপে পরিবর্তিত করেছে। প্রতিটি আইনের মধ্য দিয়েই ভারতের জনগণ গণতান্ত্রিক অধিকার, প্রশাসনিক অংশগ্রহণ ও স্বাধীনতার পথের দিকে অগ্রসর হয়েছে। অবশেষে ১৯৪৭ সালের স্বাধীনতা আইন ভারতের সংবিধান রচনার ভিত্তি স্থাপন করেছে।

<<<<<<<<<<<<<<<<🌹সমাপ্ত🌹>>>>>>>>>>>